গলাচিপা (পটুয়াখালী) থেকে রাকিবুল হাসান
বরিশালের বৃহত্তম শষ্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিত গলাচিপায় বরাবরের মতো এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আমন ধান উৎপাদন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। শেষ পর্যন্ত সব ঠিক থাকলে শুধু গলাচিপা উপাজেলায়ই প্রায় ৬শ’ কোটি টাকার আমন ধান বিক্রি করবে কৃষকরা। গলাচিপা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এবছর অতিবর্ষণ, বীজ পচে যাওয়াসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে আমনের উৎপাদন কম হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর ৮ উপজেলার মধ্যে গলাচিপায় এবার সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। এবছর ৬৬ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্র ধরা হলেও চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে আমন চাষ হলেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় খুশি কৃষকরা। তবে লক্ষমাত্রার চেয়ে কম জমিতে আমন চাষের কারণ জানালেন উপজেলা সহকারী কৃষিকর্মকর্তা আকরামুজ্জামান বলেন, উপকূলীয় গলাচিপায় কৃষকরা তরমুজ চাষে ঝুঁকেছেন। তাই তারা আগাম তরমুজ পাওয়ার জন্য ধান চাষে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবার রোপা আমনের বীজতলা থেকেই কৃষকরা একের পর এক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। পর পর দু’ দফা অতিবর্ষণসহ সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ব্যাপক বীজতলা নষ্ট হয়েছে।
অনেক কৃষক পর্যাপ্ত বীজ ধান সংগ্রহ করতে পারেনি। এসব কারণে শুরুতে কিছুটা ঝুঁকি থাকলে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হাসলো কৃষকরাই। পানপট্টি ইউনিয়নের কৃষক চান মিয়া বলেন, আমি মোট সাড়ে চার একর জমিতে ধাণ চাষ করেছি। বর্তমানে ধানের বাজার ৯০০-১০০০ টাকা করে। কিন্তু আমার উৎপাদন প্রতি মনে খরচ একহাজার টাকার বেশি। এর পরেও খুশি যে শেষ পর্যন্ত কোন দুর্যোগ ছাড়াই ধান ঘরে তুলতে পেরেছি।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে শুরু হয়েছে ধান কাটার পালা। ইতোমধ্যে আমন আগাম জাতের গিরমি ও মালা ধান বাজারে আসতে শুরু হয়েছে। কিন্তু ধানের বাজারে ঘটেছে ব্যাপক দরপতন। এ সপ্তাহে প্রতিমন ধান ৯৫০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা দর উঠেছে। এরপরেও আড়ত মালিকরা ধান কিনছেন না।
গলাচিপার ধানের আড়ত মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, গত বছর এসময়ে যেখানে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই আড়াই লাখ মন ধান বিক্রি হতো। অথচ এখন সপ্তাহে দেড় লাখ মন ধান বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ৯০০-৯৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কাজলা ধান ১০০০ হাজার টাকা করেও বিক্রি হচ্ছে। এবার ফলন ভালো তাই ধানও বেশি। দাম গত বছরের চেয়ে এসময় অন্তত ১০০ টাকা কম।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আকরামুজ্জামান বলেন, এবছর আমন ধানের অধিক ফলন হওয়ায় দাম কিছুটা কম যাচ্ছে। আবার একসাথে সব ধান বাজারে ওঠায় দাম কমেছে। বর্তমান বাজার দরে ধান বিক্রি করে উপজেলার প্রায় ৪৮ হাজার কৃষক পরিবার বড় একটি অংকের লোকসান দিবে। তবে সমন্বিত চাষাবাদে তারা এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata